23 Dec 2024, 03:35 am

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে মানবাধিকার বলে কিছু ছিল না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশে মানবাধিকার বলে কিছু ছিল না এমনটাই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১০ ডিসেম্বর) ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের যাতে কেউ বিচার করতে না পারে সে জন্য দায়মুক্তি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে আমাদের স্বজনদের হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পূর্বে আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মামলা করতে পারিনি।

‘সরকার গঠনের পর সেই কালো আইন বাতিল করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরাই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমরা সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের ব্যবস্থা করেছি। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘সবার জন্য মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

শেখ হাসিনা সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আহ্বান- ‘Together, let’s rejuvenate the Universal Declaration of Human Rights, demonstrate how it can meet the needs of our time and advance its promise of freedom, equality and justice for all’ এর প্রতিও পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে হাজার বছরের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সারাজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু এমন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে প্রতিটি মানুষ মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা লাভ করবে। এ অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। অথচ তার সঙ্গেই মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ সংগ্রাম, অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা লাভের মাত্র নয় মাসের মধ্যেই তিনি দেশের সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষার দলিল হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হলে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছেন।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও বিচারের আওতায় এনেছি। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতোমধ্যে কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ফলে বর্তমানে কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শৈশব/কৈশোর থেকেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইনভিত্তিক ‘মানবাধিকার কোর্স’ চালু করেছি। তাছাড়া নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশনের উদ্যোগে ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছে। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ মানবাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। আমরা আমাদের সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থসেবা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছি। আমরা নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে আমরা বিশ্ব দরবারে মানবাধিকার রক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রেখে যাচ্ছি, যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপক্ষে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে মানবাধিকার সংক্রান্ত আটটি আন্তর্জাতিক দলিলে স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে। বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) নির্বাচিত সদস্য হিসেবে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্যও কামনা করেন শেখ হাসিনা।  সূত্র : বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 6264
  • Total Visits: 1412721
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২০শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ৩:৩৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018